শাহজালালে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-মানিচেঞ্জার

Passenger Voice    |    ০৫:২০ পিএম, ২০২৪-০২-০৬


শাহজালালে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-মানিচেঞ্জার

দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে এক চক্র। এই অনিয়মে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জার।

এই অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিদিন শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। এমনটিই জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান দুদক সচিব।

তিনি বলেন, ‘গতকাল সোমবার এয়ারপোর্টে দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে ওই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রবাসী শ্রমিকরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনেন- তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকাররা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই কিনে বাইরে বিক্রি করেন। যা পরবর্তী সময়ে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়।’

এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে বলেও জানান দুদক সচিব। গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে এবং সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয় বলেও জানান তিনি।

মাহবুব হোসেন আরও বলেন, ‘ওই অভিযান পরিচালনা শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারদের এক চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।’

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণকারীরা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা তাদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনক্যাশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনক্যাশমেন্ট ভাউচার এনক্যাশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জাররা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি নিয়ে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেন।’

‘এছাড়াও তারা সইবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনক্যাশমেন্ট স্লিপ দেন। এসব বিদেশি মুদ্রা ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এগুলো যুক্ত হয় না।’

দুদক সচিব বলেন, ‘দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয় ও মানিলন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত। এছাড়া কিছু মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান, যথা- এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই অনিয়মের ফলের প্রতিদিন আনুমানিক একশ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে কেনা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করেন। দুদকের অভিযানে এমন তথ্য মিলেছে।’

অভিযানকালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার কর্তৃক এনক্যাশমেন্ট স্লিপ ছাড়া ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার ও সইবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে।

সন্দেহভাজন ও জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন জানিয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘তাদের মদতদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যব্যস্থা নেওয়া হবে।’


প্যা/ভ/ম